লিপস্টিকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি

সঙ্গীতা চন্দ

ফ্যাশনটা হল মুখোশ, স্টাইলটা হল মুখশ্রী।

না, এক্ষেত্রে অমিতই শুধু একথা বলছে তা নয়, বলছে, অভ্যস্ত চিন্তার বাইরে গিয়ে যারা নিজেকে অপাবৃত করার মধ্যে গড়ে তুলছে এক নতুন স্টাইল। পুজো যত ঘনিয়ে আসে ততই যেন সারাবছরের যাবতীয় অবহেলা-লাঞ্ছনা ইত্যাদি সহ হাজারও আলস্য নিমেষেই ভ্যানিশ হয়ে উপদেশের গ্যাঁজলা তোলা বাণী চ্যানেলে-চ্যানেলে দিনমান পায়চারি দিয়ে যায়। এক্ষেত্রে দু’টো জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখা চাই। এক বুদ্ধি আর দুই সংযম। যার শুধু প্রথমটি আছে, সে পকেট গড়ের মাঠ করে ঝকঝকে আয়নার মতো চমক দেবে সারা পুজো জুড়ে। আর যার দ্বিতীয়টিই সম্বল, সে শুধু ভেবে যাবে উত্তরপুজো সময়কাল নিয়ে। 

যদি বুদ্ধি আর সংযম দুইই থাকে কাঁখে, তাহলে আর কোনও কথাই নেই, বুক পকেটে শুধু ফ্যাশনই নয় বরং নিজস্ব স্টাইলকে কোল পাঁজা করে বছরের পর বছর দাপিয়ে যাবে সে— সেই পুরুষ। সেই নারী।

আসলে, ফ্যাশন স্রোতের মতোই বহমান। কিন্তু স্টাইল? তাকে অক্ষুণ্ন রাখার মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট কসরত; কোনও ঋজু-ভঙ্গুর চিন্তার আপোষ নেই সেখানে। কখনও প্রাচ্য কখনও বা পাশ্চাত্য। কখন যে কোনটা লেপ্টে যাবে পোশাকে-পরিধানে, নিজেদেরও হুঁশ থাকে না। 

যেমন ধরুন, ডেনিমের প্যান্ট পরতে পরতে গলায় গলিয়ে নিলাম আফগানের ঠাসা ঝুল, শরতের তুলতুলে আকাশে, নীল বাগ্ৰু প্রিন্টের শার্টের সঙ্গে ডেনিম প্যান্ট— এ যেন শুধু ত্বকেরই আরাম নয়, মনের শান্তিও বটে। সঙ্গে কাঁধে রাখা যায় নানান রঙের মিশেলের এক ব্যাগ। এই চকড়া-বকড়া ব্যাগ পুরো ব্যক্তিত্বকেই তুলে ধরতে পারে এক লহমায়। করোনা-কালে এ বারের পুজোয় বাইরে না যান, ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়েই না হয় এমন সাজে নজর কাড়ুন।

কিংবা গরমের ক্লান্তির কথা মাথায় রেখে শাড়িও দিতে পারে এক নির্নিমেষ সৌন্দর্য। আজরাখ প্রিন্টের শাড়ি তার সঙ্গে আলোছায়ার মতো খেলবে সম্পূর্ণ বিপরীত রঙের ব্লাউস। এই আজরাখের কারুকাজ তুলনামূলক ঠাসা হওয়ায় তার সঙ্গে যৎসামান্যই অলঙ্কারই মানায়। তবে এখানে চোখের কাজল এবং গাঢ় লিপস্টিকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কেন? সেতো কাজল চোখ আর পলাশকলি ঠোঁট-ই জানে সুন্দরের সর্বনাশ-কথা! 

‘আপ রুচি খানা, পর রুচি পরনা’— এটি অনিবার্য হলেও আমি এই নীতি ভাঙার কথাই বলব এক্ষেত্রে। কারণ, হয়তো আমাকে কোনও একটি নির্দিষ্ট পোশাকে যারপরনাই সুন্দর দেখাচ্ছে, কিন্তু আমি সেটি পরে বিন্দুমাত্র স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না, এক্ষেত্রে আমি মনে করি সেটি পরাও সমীচীন নয়। উল্টোদিকে পছন্দের পোশাকে নিজেকে উপস্থাপন করতে না পারলে সেই পোশাকও গ্রহণযোগ্য হয় না। রুচিবোধ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ এই দু'নৌকায় পা রেখে যুগের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলাই হল প্রকৃত স্টাইল। এবং পুজোর সাজের গোপন শর্ত!

সময়ের ধারণা আক্ষরিক অর্থেই এত আটপৌরে এবং আমাদের চেতনায় এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে, কখন ধুতি ছেড়ে পাজামা পরেছি আর ব্লাউসের ঘর ছুট হুক খুলে, তাতে চেন বসিয়েছি— সত্যিই মনে পড়ে না। শুধু মনে পড়ে, বিগত ছয়মাস ধরে রঙ-বেরঙের মাস্ক ব্যাগে নেওয়ার কথা টিমটিম করে পিটুইটারিতে। সংক্রমণের মাত্রায় যেভাবে গ্রাফ শীর্ষ ছুঁই ছুঁই, তাতে আমাদের যাবতীয় শাড়ি-পাঞ্জাবী-চুড়িদার-জিন্স এসবের সঙ্গে এবার মুখে মুখে বিরাজ করুক একফালি মুখোশ। ফ্যাশন দুনিয়ায় পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে ইতিমধ্যেই যা বিশ্বজুড়ে বিকোচ্ছে! কেন না, স্টাইল মুখশ্রী হলেও, এ বার মুখোশটাই যে ভুবনগ্রামের নব্য ফ্যাশন!