ঘরে বসে টইটই


ঘরে বসে টইটই

পারমিতা ভট্টাচার্য

পরিচিত যে কেউ, তা বন্ধু হোক বা পাড়াপড়শি, বেড়াতে গিয়েছে শুনলে ফিরে আসার পর আমি হানা দিতাম তাদের বাড়ি,  কি না যেখানে বেড়াতে গিয়েছিল সেই জায়গার গল্প শুনতে, ছবি দেখতে। সে সব গল্প শুনে ও ছবি দেখে আমি অবলীলায় ঘুরে বেড়াতাম সেই জায়গায়। আমার  কল্পনায় ভ্রমণ তখন কাহিনীকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেত খরগোশের মতো। একেই যে মানস ভ্রমণ বলে ছোটবেলায় তা জানতাম না। এখন একটু একটু বুঝতে পারি কারণ, বাস্তবে যতটা না বেড়াই করি  তার চেয়ে ঢের গুণ বেশি বেড়াই মানসলোকে।

আমাদের জীবন শামুকের মতো খোলে মোড়া। নিত্য অভ্যেসের ভুসোকালির আস্তরণ পুরু হলেই আমরা যেন খোলসের মধ্যে থেকে মাথা বের করে আকাশ দেখতে চাই। জীবনকে একটু আলো বাতাসে সেঁকে নিতে চাই। তার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে ভ্রমণ। কিছুদিন চেনা দেওয়ালের গণ্ডি ডিঙিয়ে অচেনা গণ্ডিতে ঘুরে এলেই আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে মন। জীবনকে নতুন করে ভালবেসে আরও কিছুটা এগিয়ে নিয়ে চলা যায়। ‘বাঙালি ঘরকুনো’— এই তকমা বাঙালির ক্ষেত্রে কোনও কালে কোনও ভাবেই খাঁটে না। কারণ, খাঁচার ফাঁকফোকর গলে পিঠে ব্যাগ নিয়ে তারা চিরকাল ঠিক বেরিয়ে পড়ে, আনাচে-কানাচে। আসলে বাঙালি তো বাউলেরই আরেক রূপ ! 

‘...ভ্রমণবৃত্তান্তের একটা মস্ত সুবিধা এই যে, তার মধ্যে অবিশ্রাম গতি আছে অথচ প্লটের বন্ধন নেই- মনের একটি অবারিত স্বাধীনতা পাওয়া যায়। ...’ রবীন্দ্রনাথের এই বিশ্লেষণ যথার্থ।

পুজো ও ভ্রমণ একে অপরের দোসর। তিনমাস আগে থেকেই বাঙালি টিকিট কেটে, হোটেল বুকিং, ঘোরার পরিকল্পনা সব রেডি করে বসে থাকে। শুধু অপেক্ষা থাকে, ঘন্টা বেজে ওঠার। তবে এ বছরের সমস্ত হিসেব গণ্ডগোল করে দিয়েছে কোভিড-১৯। প্রকৃতির নিয়মে পুজোর ঘন্টা বেজে গেলেও গোটা বিশ্ববাসী আজ 'অমল'। গৃহবন্দি, জানালায় চেয়ে চেয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। এই স্বপ্নের সঙ্গে যদি জুড়ে  দেওয়া যায় বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি ভ্রমণকাহিনীগুলিকে তা হলে বিষয়টা মন্দ তো হয়-ই না বরং করোনা-প্রহরে উৎসব-সফরের মেজাজ আনে। বাংলা সাহিত্যের এক একটি ভ্রমণকাহিনী  সুতো ছাড়তে ছাড়তে স্বপ্নালোকে মানসভ্রমণকে মধ্যগগনে ঘুড়ির মতো উড়িয়ে দেবে - এটা নিশ্চিত! কারণ বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণকাহিনীর তালিকা যেমন সুদীর্ঘ তেমনি গুণমানে অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

বাঙালির ভ্রমণ তালিকায় একক ও স্বতন্ত্র স্থান করে নিয়েছে উত্তরভারতের হিমালয়। আবহমান কাল ধরে ভারতের সনাতন রূপের সাক্ষ্য বহন করে আসছে সে। যেন সৌন্দর্যের খনি। হিমালয়ের অফুরন্ত বৈভব এখানে খুব সহজে ধরা পড়ে। আদ্যন্ত পাহাড়ে মোড়া হিমালয়ের এই অংশে এত গন্তব্য যে, বহুবার দেখেও শেষ করা যায় না। এর সম্মোহনী টানে বারে বারে ছুটে আসে বাঙালি। পাইন, ফার, একাধিক সরলবর্গীয় বৃক্ষের আড়াল থেকে সোনালি রোদের উঁকিঝুঁকি, কুয়াশার ফিনফিনে চাদর, 'অমল-ধবল' পাহাড়চূড়া, পাহাড়ি নদীর রিনরিন, নির্জনতার নৈঃশব্দ্য ভঙ্গ করা নাম না জানা পাখির কুহুতান মাতাল করে তোলে। প্রকৃতির এই নৈসর্গিক রূপ-রস উপলব্ধির সমস্ত উপায় লুকিয়ে আছে সে-সব ভ্রমণকাহিনীগুলিতে।

জলধর সেনের সেরা ভ্রমণ বিষয়ক বইগুলির মধ্যে 'হিমালয়' অন্যতম। অবশ্য তিনি ১৮৯৪ সালে যে হিমালয় দেখেছেন, আজ তা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এই বদল বলতে বোঝানো হচ্ছে পথের দুর্গমতা, থাকার ব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থা- আগের থেকে এখন অনেকটাই সুলভ হয়েছে, আর কী! প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ধারা পুরোপুরি অক্ষুন্নই আছে বলা যায় না। বিশ্বায়নে সঙ্গে সঙ্গে দূষণ কেড়ে নিয়েছে তার অনেক রূপ। তবুও যতটুকু আছে তাই বা কম কী! তাঁর বইটিতে দেবপ্রয়াগের শোভা, রুদ্রপ্রয়াগ থেকে পিপল চটির তৎকালীন দুর্গমতা, বদরীগামী পথবৈচিত্র‍্য, বরফ কেটে রাস্তা তৈরি, যোশীমঠের পথের অলৌকিক সৌন্দর্য, ব্যাসগুহার তুষারাচ্ছন্ন নদী পরিসর, ভাগীরথী অলকানন্দার প্রবাহ, ইত্যাদির বর্ণনা ঘরে বসেই পাঠককে পৌঁছে দিতে পারে পাহাড়ী  কোনও গন্তব্যে। বইটিতে একদিকে যেমন বানিয়ানের পিলগ্রিমস প্রসেস, একাধিক রবীন্দ্রসঙ্গীত, আনন্দমঠ, বিবর্তনবাদ, মেসমেরিজম, থিয়োসফি শঙ্করাচার্যের উল্লেখ আছে, অন্যদিকে স্বর্ণলতা উপন্যাসের কথা, বদরির পাণ্ডা প্রসঙ্গ বা ঈশ্বর গুপ্তের পাঁঠা বিষয়ক কবিতা, শেক্সপীয়র, মীরাবাঈ-এর উল্লেখ পাঠকের মননশীলতাকে উদ্দীপ্ত করে তোলে। তাঁর লেখা হিমালয় ভ্রমণ বিষয়ক অন্যান্য বইগুলি হল - পথিক, হিমাচল বক্ষে, হিমাদ্রি, দশদিন প্রমুখ।

উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের 'হিমালয়ের পথে পথে' বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য ভ্রমণকাহিনী। এই বইয়ের নিঁখুত বর্ণনার আঙুল ধরে দিব্য ঘুরে বেড়ানো যায় হিমালয়ের বাঁকে বাঁকে।

আমাদের প্রায় সকলের জানা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিকবার হিমালয় ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সময় কাটিয়েছেন উত্তর ভারতের বিভিন্ন শৈলশহরে। তাঁর লেখা ভ্রমণবৃত্তান্ত অসাধারণ। ১৮৯৮ সালে এই লেখাগুলিকে তাঁর আত্মজীবনীতে সংযোজিত করা হয়।

হিমালয়ের হাতছানিতে সাড়া দিতে প্রবোধ কুমার সান্যালের 'মহাপ্রস্থানের পথে' ও 'দেবতাত্মা হিমালয়' না পড়লে হিমালয় সফর অনেকটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। লেখক হিমালয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘদিন কাটিয়েছিলেন। ১৯৩২ সালে কেদারনাথ-বদ্রীনাথ ভ্রমণ ও পরে হৃষিকেশ থেকে রানীক্ষেত পর্যন্ত ৩৮ দিনে পায়ে হেঁটে পরিক্রমণের অভিজ্ঞতা লিখেছেন 'মহাপ্রস্থানের পথে' বইটিতে। বেড়ানো মানে তো শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রসাস্বাদন নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সেখানকার মানুষ, সাহিত্য, সংস্কৃতি সব কিছুকেই চেখে দেখা। এরকমই অভিজ্ঞতার কথা লেখা আছে প্রবোধ কুমার সান্যালের 'দেবতাত্মা হিমালয়' বইটিতে। ১৯৩২ থেকে ১৯৩৬ দীর্ঘ চার বছর লেখক হিমালয় সন্নিহিত নানা স্থান ভ্রমণ করেন। সেই বেড়ানোর অভিজ্ঞতা, হিমালয়ের নানান প্রদেশের মানুষের জীবন, সংস্কৃতি, সমাজ আর তাঁর  নানান মানুষের সংস্পর্শে আসার অভিজ্ঞতা আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে সেই সময়ে। ভ্রমণকাহিনী তো আসলে সেই সময়কে দু'মলাটের ভাঁজে আটকে রাখা !

হিমালয় ভ্রমণ নিয়ে রচিত গ্রন্থের সংখ্যা বাংলা সাহিত্যে নেহাত কম নয়! যেমন, শ্রী শুদ্ধানন্দ ব্রহ্মচারী প্রকাশ করেন 'হিমালয় ভ্রমণ'। বিদ্যাবিনোদ লিখেছেন 'উত্তরাখণ্ড পরিক্রমা' (১৯১২)। হিমালয় ভ্রমণকে নানা অঞ্চলে ভাগ করে বেড়ানো যায়। এক একটি অঞ্চলের শুধু গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য দেখতেই কমপক্ষে পনেরো দিন সফর পরিকল্পনা করা উচিত। 

এমতাবস্থায় যা অসম্ভব। এক্ষেত্রে শংকু মহারাজ রচিত 'হিমালয় ভ্রমণ' কাহিনী অদ্বিতীয়। ১ম থেকে ৫ম খণ্ডের বই 'হিমালয় ভ্রমণ' পড়লে ঘরে বসেই অন্তত গাড়োয়াল ও কূমায়ুন হিমালয়ের দুটি অঞ্চলই  যে টইটই করে ঘোরা সম্ভব সে ব্যাপারে আমি একদম নিশ্চিত। গোমুখ ভারতের দুর্গমতম তীর্থ। কিন্তু এই তীর্থপথের পটে আঁকা নৈসর্গিক রূপময়তার কাছে সেই দুর্গমতা একেবারেই নস্যি। তাই জীবনকে তুচ্ছ করে প্রতিবছর ছুটে আসে পর্যটকের ঢল। পথের বাঁধনই পর্যটকদের পরস্পরের কাছে নিয়ে আসে। এত সৌন্দর্যের বৈভবের মধ্যে চোখ আটকে গেল শংকু মহারাজের 'হিমালয় ভ্রমণ' পড়তে গিয়ে। তিনি লিখেছেন, গঙ্গোত্রী গিরিতীর্থ হলেও সেখানেও মানুষ বাস করে। আর মানুষ যেখানে আছে পলিটিক্সও সেখানে আছে- এ তো আশ্চর্যের কথা নয়। কাজেই গঙ্গোত্রীতেও জন্ম নিয়েছে পলিটিক্স। গঙ্গোত্রীতে প্রধাণত দুটি সমাজ - সাধুসমাজ ও পূজারীসমাজ। তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে উভয়ের মধ্যে রয়েছে অপ্রীতিকর প্রতিযোগিতা। গঙ্গোত্রীর দরিদ্র পূজারীরা প্রায় সকলেই উখীমঠের বাসিন্দা, তাঁরাই মন্দিরের মালিক- যে মন্দিরকে নিয়েই গড়ে উঠেছে গঙ্গোত্রী। আর সাধুরা প্রায় সকলেই অবস্থাপন্ন। কারণ প্রায় সাধুর কিছু ধনী শিষ্য আছে। কাজেই তাঁরা পূজারীদের কর্তৃত্ব মেনে নেয় না। এই হল সংঘর্ষের মূল কারণ। অলকানন্দা ও মন্দাকিনীর সুবজাভ জলস্রোত যখন আপনার চোখে স্বপ্ন আঁকছে তখন এমন সস্তা রাজনীতি সংবেদনশীল পাঠককে একটু হলেও ভাবাবে। আসলে লড়াই করে বেঁচে থাকাটাই বড়। তা মানুষের সঙ্গে মানুষের হোক আর প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের হোক। লড়াই সব জায়গায়! শংকু মহারাজের 'হিমালয় ভ্রমণ' পড়তে পড়তে গঙ্গোত্রীতে আমার পরিচয় হয় স্বামী সারদানন্দের সঙ্গে, যিনি জীবনের সমস্ত তুচ্ছতাকে পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন এখানকার অকৃত্রিম সৌন্দর্য আবৃত মায়াময় স্বপ্নরাজ্যে। তিনি এমন একজন সন্ন্যাসী তাঁর সঙ্গে কারোর কোনও বিবাদ ছিল না। দক্ষিণ-ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার। প্রথম জীবনে যাঁকে ভালোবেসেছিলেন তাঁকে জীবনে না পেয়ে বিরহে চলে এসেছিলেন হিমালয়ে। পরবর্তীকালে পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে নিতে এসেছিলেন, প্রেয়সীকে নিয়ে সুখী হতে বললেও তিনি আর ফিরে যাননি। কারণ, ততদিনে তাঁর জীবনের সুখ সম্পর্কে ধারণা পাল্টে গিয়েছিল। একদিন যাঁকে না পাওয়ার বিরহে হিমালয়ে এসেছিলেন, পরে হিমালয়ের জন্য তিনি তাঁর সেই প্রিয়তমাকে অনায়াসে পরিত্যাগ করেছিলেন। আসলে ভালোবাসার বৃহৎতর ক্ষেত্রে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। স্বামী সারদানন্দের সঙ্গে  যত আলাপ ঘন হচ্ছে তত কৌতুহলী হয়ে উঠেছি। বহুগুণে গুণী সারদানন্দ সম্পর্কে আমি আর বিস্তারিত কিছু জানাতে চাই না। কারণ, আমার বিশ্বাস এই লেখা যিনি পড়বেন তাঁর একবার হলেও কৌতুহল হবে দেবতুল্য সেই মানুষটি সম্পর্কে জানতে।


সৌন্দর্যও যে অসহ্য হয় তা পাউরির ঢেউ খেলানো উপত্যকা পেরিয়ে গাড়োয়ালের সব বরফাবৃত শিখরগুলি কল্পনা না করলে বোঝা যায় না। ওক, পাইন গাছে ছাওয়া ব্রিটিশদের হাতে তৈরি এক মনোরম পাহাড়ি শহর হল ল্যান্সডাউন। নির্জনতা বিলাসী ও পক্ষী প্রেমিকদের ঠিকানা খিরসু সবই ঘুরতে পারবেন বইয়ের পাতা উল্টে উল্টে। শংকু মহারাজের বর্ণনায় আপনি ভাসতে ভাসতে দেখতে পাবেন মুন্সিয়ারি থেকে পঞ্চচুল্লি। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী দ্রৌপদী না কি এই পাঁচটি চুল্লিতে পঞ্চপাণ্ডবের জন্য আলাদা আলাদা রান্না করেছিলেন। পাহাড়ি গাছের সবুজের ফাঁক দিয়ে নন্দাদেবী, নীলকণ্ঠ, গৌরীপর্বত, কামেট, নন্দাঘুটি, ত্রিশূল, হাতিপর্বত ইত্যাদি শৃঙ্গ সার বেঁধে দাঁড়িয়ে  হাতছানি দিচ্ছে। এইসমস্ত ভ্রমণকাহিনী তন্দ্রালোককেও মুড়ে রাখে নির্জন সুস্বাদু শব্দমুখরতায়।

হিমালয়ের কথা যখন হচ্ছে তখন কবিগুরুর কথা থাকবে না এ কেমন হয়! মাত্র এগারো বছর বয়সে পিতা, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হিমালয় ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত 'জীবনস্মৃতি'-র পাতা থেকে সংগ্রহ করতে পারি। পরবর্তী সময়ে তিনি কুমায়ূন হিমালয়ের কোলে আলমোড়া, সিমলা গিয়েছেন। তাঁর লেখা বিভিন্ন চিঠিপত্র থেকে সেই সময়ের নানা কথা জানতে পারি।

শিশুমহলে সুখ্যাত, সর্বজনবিদিত সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর 'তিব্বত প্রসঙ্গ'-সহ 'দার্জিলিং ভ্রমণ'-কথা 'সখা', 'সাথী', 'সন্দেশ', 'মুকুল' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর পর্বতের সুখপাঠ্য বর্ণনা একটু উল্লেখ না করে পারলাম না। পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের সখ্য কতটা প্রগাঢ় তা এই উদ্ধৃতি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়- ‘‘পর্বতের কোলে মেঘের নিদ্রা দেখিতে বড়ই সুন্দর। চঞ্চল মেঘ সমস্ত দিন ধরিয়া ছোটাছুটি করে। তাই কি সন্ধ্যাকালে তাহার ঘুম পায়? ওই দ্যাখো, তাহারা কেমন শান্ত হইয়া পর্বতের গায়ে শুইয়া পড়িয়াছে। সমস্ত রাত্রি তাহারা ওই রূপ ভাবে কাটায়। সকালবেলা সূর্যের আলো তাহাদের গায়ে পড়িবা মাত্র তাহাদের ঘুম ভাঙিয়া যায়।’’

বাংলা সাহিত্যের এক একটি কালজয়ী ভ্রমণকাহিনী তাই আমাদের অনুভবী সত্তাকে উদ্দীপ্ত করে। বিচার-বুদ্ধি মনস্কতাকেও পোক্ত করে। হিমালয় যত দূরেই হোক  ঘরে বসেই অনুভব করা যাবে হিমেল রোদ্দুরমাখা শিরশিরে বাতাসের আদর, ঝিরঝিরে তুষারপাত, পাইনের ঋজু কাণ্ডের ফাঁকে আটকে থাকা একটুকরো কুয়াশামাখা মেঘ। দুই পাহাড়ের উপত্যকায় দেখা যাবে সবুজতরঙ্গের ঢেউ। মানসচক্ষু উন্মোচিত থাকলে নিজের আপন মনে গাইতে ইচ্ছে করবে- 'এই লভিনু সঙ্গ তব, সুন্দর হে সুন্দর !/  পুণ্য হল অঙ্গ মম, ধন্য হল অন্তর।/ সুন্দর হে সুন্দর !'

(চলবে)

Post a Comment

0 Comments